শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মসজিদে নববির খাদেম আগা আলি বাদির ইন্তেকাল

ধর্ম ডেস্ক:
গত ২০ নভেম্বর ইন্তেকাল করেছেন মসজিদে নববির সবচেয়ে বেশি বয়সী খাদেম শায়খ আগা আবদুহু আলি ইদরিস। তার মাত্র পাঁচ দিন পরই পবিত্র মসজিদটির আরেকজন খাদেম আগা আলি বাদি ইন্তেকাল করলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

গত রবিবার ইনসাইড দ্য হারামাইনের এক্স অ্যাকাউন্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিন আসরের নামাজের পর মসজিদে নববিতে প্রবীণ এ খাদেমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। আগা আলি বাদি হলেন নবী কারিম (সা.)-এর রওজা ও মসজিদে নববির মিম্বরের সর্বশেষ খাদেমদের অন্যতম। সর্বশেষ এ কারণে যে, সম্প্রতি ওই বংশের লোকদের মধ্যে তিনিসহ মাত্র ২ জন বেঁচেছিলেন।

আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর মসজিদে নববি সম্প্রসারণ ও রওজা মোবারকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ দেওয়া হলেও পবিত্র রওজার মূল কক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন আগারা। তাদের কাছেই রওজার চাবি সংরক্ষিত থাকে। মসজিদে নববি খোলা, বন্ধ করা, আলোকিত করা এবং সুগন্ধি দেওয়ার মতো কাজগুলো তারাই করে থাকেন।

২০২২ সালের জুলাই মাসে আরেক ‘আগা’ ও পবিত্র রওজার খাদেম শায়খ হাবিব মুহাম্মদ আল-আফরি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ৩৮ বছর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজার ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কাজের দায়িত্বে ছিলেন। সেই সঙ্গে জুমার খুৎবার মিম্বরের তালার চাবি সংরক্ষণ করতেন। ২০১৯ সালে শায়খ আফরি অসুস্থ হলে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, বার্ধক্য যদি আমাকে কাবু না করত, তবে আমি আমৃত্যু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করে যেতাম।

‘আগা’ শব্দটি অনারব। শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন ‘আগাওয়াত।’ ফারসি, কুর্দি ও তুর্কি ভাষায় এর ব্যবহার রয়েছে। বাড়ি বা পরিবারের প্রধান কিংবা প্রধান সেবকসহ এর নানা অর্থ রয়েছে। তবে মক্কা ও মদিনায় বিশেষ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যারা পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোর সুরক্ষাসেবায় নিযুক্ত থাকেন তাদের আগা বলা হয়।

মূলত আইয়ুবি যুগ থেকে (১১৬১ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৫৫৭ হিজরি) পবিত্র রওজা শরিফের সুরক্ষায় আগাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাদের বেশিরভাগ হাবশা থেকে এলেও কেউ কেউ ভারতীয় উপমহাদেশ ও ট্রান্স-অক্সানিয়া অর্থাৎ নিম্নমধ্য এশিয়া অঞ্চল থেকে এসেছেন। মসজিদে নববিতে মহানবীর পবিত্র হুজরাসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা তাদের মূল দায়িত্ব।

ইসলামি যুগে তারা সমাজে উঁচু মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। হারামাইন এলাকায় কাজ করার সুবাদে মানুষ তাদের খুবই সম্মান করত। বাদশাহ, আমিরসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের ওঠাবসা ছিল।

১৩৪৬ হিজরিতে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ আগাদের নিজ নিজ দায়িত্বে বহাল রাখেন। হাজরে আসওয়াদ, রুকনে ইয়ামান, মাকামে ইবরাহিমে সুগন্ধি লাগানো, পবিত্র কাবাঘর ধোয়া, পবিত্র রওজা শরিফ পরিচ্ছন্ন রাখাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব তারা পালন করেন।

১৯৭৮ সাল মোতাবেক ১৩৯৯ হিজরিতে সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ বিন বাজ (রহ.) তাদের আগমন বন্ধ করতে বাদশাহ ফাহাদকে চিঠি লিখেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, হাবশার অনেক পরিবারের মধ্যে সন্তানদের নপুংসক করার প্রচলন রয়েছে। সন্তানদের তারা মদিনায় কাজের জন্য পাঠাত। মানুষের মর্যাদার পরিপন্থী হওয়ায় ইসলামে এ ধরনের কাজ নিষিদ্ধ। এক সময় তাদের সংখ্যা শতাধিক হলেও এবং বর্তমানে মাত্র একজন আগা জীবিত আছেন। তার নাম শায়খ নাউরি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION